শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড মাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি

প্রকাশিত - ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫   ০৭:১৭ পিএম
webnews24

২৪ঘণ্টা অনলাইন : নানা নাটকীয়তা আর ঘটন-অঘটনের পর অবশেষে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। করাচিতে বুধবার উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকরা চাইবে জয় দিয়ে শুরু করতে, অন্যদিকে আসর শুরুর আগে পাওয়া সাফল্য ধরে রাখতে চায় কিউইরা। সময়ের হিসেবে ৮ বছর পর ফিরছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৭ সালের পর আবারও মাঠে গড়াচ্ছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। পাকিস্তান ও দুবাইয়ের মাটিতে টুর্নামেন্টটির নবম সংস্করণের পর্দা উঠবে। ওয়ানডে ফরম্যাটের এই প্রতিযোগিতার অবস্থান মূলত বিশ্বকাপের পরই। বলতে গেলে কিছুটা সংক্ষিপ্ত পরিসরে  শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে আরও জমজমাট লড়াইয়ের মঞ্চ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় হয়েছে অনেক রেকর্ড। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম আসর হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। যদিও ওই সময় এর নাম ছিল উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ, সেই নক-আউট প্রতিযোগিতার নাম পরবর্তী ২০০২ আসরে বদলে ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’ করা হয়।

গুরুত্ব ও মর্যাদার বিচারে ওয়ানডে বিশ্বকাপও যেন যথাযথ অবস্থানে থাকে, সে কারণে এখন মাত্র আটটি দেশ নিয়ে হয়ে থাকে ভিন্ন নামের ওয়ানডে টুর্নামেন্টটি। প্রথম আসর হয়েছিল রাউন্ড রবিন লিগ ফর‌ম্যাটে। ২০০৯ সাল থেকে সেটি হয়ে আসছে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল নিয়ে। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার জন্য যোগ্য দল নির্বাচিত হয় গত ২০২৩ বিশ্বকাপ থেকে। সেখানে আয়োজক পাকিস্তানসহ পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ আটটি দল আসন্ন প্রতিযোগিতার জন্য টিকিট নিশ্চিত করে। যেখানে জায়গা হয়নি সাবেক দুই চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। দুই গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়া দেশগুলো হচ্ছে, ‘এ’ : ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ : অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে পাকিস্তানের ২৯ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

ক্রিকেট পাকিস্তানে কেবল একটি খেলা নয়; এটি তাদের উত্তরাধিকার, আবেগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই খেলাটিকে অবলম্বন করে দিন কাটাচ্ছে, জাতি গঠনের হাতিয়ারও এই ক্রিকেট। করাচির ঘিঞ্জি চায়ের ধাবা থেকে শুরু করে লাহোরের অলিগলি, ইসলামাবাদের জৌলুস কিংবা বেলুচিস্তানের পাহাড়ঘেরা ছোট্ট গাঁয়ে ক্রিকেটই প্রধান উপজীব্য। সেই পাকিস্তানে ২৯ বছর পর আইসিসি ইভেন্ট হতে যাচ্ছে, তাই সাজসাজ রব তো পড়বেই। রোববার রাতে লাহোরে যার কিছুটা দেখা মিলেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর দু’দিন আগে ঐতিহাসিক লাহোর ফোর্টে ‘দেওয়ান-ই-খাস’ নামক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আসরের পর্দা উন্মোচন হয়েছে। ক্রিকেটীয় নানা বিষয়ের পাশাপাশি কনসার্ট, আতশবাজি, আলোর খেলায় মোহনীয় হয়ে উঠেছিল লাহোর দুর্গ। ১৯ ফেব্রুয়ারি করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। লাহোর ফোর্টে জাঁকজমকপূর্ণ পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে আসন্ন টুর্নামেন্টের দারুণ একটি প্রিভিউ নানা বর্ণে ফুটিয়ে তোলা হয়। আলোক ছটায় দুর্গের সদর দরজায় মোহনীয়ভাবে ভেসে উঠছিল সবকিছু। সেখানে একটা বড় অংশজুড়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও ছিল।

ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই আসর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সর্বশেষ আয়োজন, যেখানে আবার ভারতকে দাপটের সঙ্গে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে ছিলেন সরফরাজ খানের নেতৃত্বাধীন ২০১৭ সালের ট্রফিজয়ী দলের সদস্যরা। মঞ্চে তুলে ধরা হয় পাকিস্তানের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। পাকিস্তানে সর্বশেষ আইসিসি ইভেন্ট হয়েছিল ১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ভারতের সঙ্গে ওই আসরের যৌথ আয়োজক ছিল তারা। এরপর নিরাপত্তা ইস্যু, রাজনৈতিক অস্থিরতা পাকিস্তান থেকে ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা সে কফিনে যেন শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল। এর অনেক বছর পর পাকিস্তানে ফিরে ক্রিকেট। দুই বছর আগে এশিয়া কাপ দিয়ে তারা কোনো আন্তর্জাতিক আসর আয়োজন করেছিল। আর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে পাকিস্তানে পুরোদমে ফিরছে ক্রিকেট। বিশ্ব ক্রিকেটে পাকিস্তানের প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখানোর মওকাও এই আসর। যদিও ভারত এই আসর খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে না বলে কিছুটা অপূর্ণতা থাকছেই। তার পরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন পাকিস্তানের জন্য বিরাট কিছু।

তাই তো লাহোরের পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) সভাপতি মহসিন নাকভী বলেন, ‘এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে ২৯ বছর পর পাকিস্তানে আইসিসি ইভেন্ট ফিরছে। তাই এই আসর আমাদের কাছে কোনো টুর্নামেন্টের চেয়েও বড় কিছু। পাকিস্তানের আতিথেয়তা ও ক্রিকেটের ভালোবাসা দেখানোর এটি দারুণ একটি সুযোগ।’ লাহোর ফোর্টে এই ঐতিহাসিক আয়োজনের পর্দা উন্মোচন অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতি অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন নাকভী। একই সঙ্গে পাকিস্তানি দর্শকদের মাঠে আসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি, ‘এখন স্টেডিয়াম কানায় কানায় পূর্ণ করার দায়িত্ব হলো আপনাদের।’ তবে এই জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে একটি বিষয় নিয়ে কিঞ্চিৎ বিতর্কও দেখা গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশ নেওয়া ৮ দলের মধ্যে ৭ দলের পতাকা লাহোর স্টেডিয়ামে দেখা গেলেও ছিল না ভারতের পতাকা। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ভারত তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে পাকিস্তান যাচ্ছে না। 
২৪ঘণ্টা/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন