২৪ঘণ্টা অনলাইন : মুশফিকুর রহিমের পর এবার নীরবে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সে কারণেই বলা হচ্ছে, সাইলেন্ট কিলারের নীরব প্রস্থান। ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন রয়েছে তার। যার মধ্যে, নিদাহাস ট্রফিতে চরম উত্তেজনাকর মুহূর্তে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে জেতানো। কার্ডিফে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে নিয়ে যাওয়া কিংবা নিশ্চিত হারের মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করা। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যাওয়া, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে বাংলাদেশকে একটা লড়াকু পুঁজি পাইয়ে দেওয়া। এই সবকিছুকে এক করলে যেই ছবিটি আপনার মানসপটে ভেসে উঠবে তিনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদউল্লাহ দ্য ক্রাইসিসম্যান। বহুবার যিনি ত্রাতা হয়ে বাংলাদেশ দলকে টেনে তুলেছেন। টিভি ছেড়ে উঠতে বসা সমর্থকদের আবারও টিভির সামনে বসতে বাধ্য করেছেন। ধ্বংসস্তুূপে দাঁড়িয়ে নতুন আশার বীজ বুনেছেন। শেষটাই জয় তুলে বীরের বেশে মাঠ ছেড়েছেন। সব ছাপিয়ে মাহমুদউল্লাহ হয়ে উঠেছিলেন এক আস্থার নাম। যাকে ভরসা করা যেত। মাহমুদউল্লাহ এখনও উইকেটে আছেন, কিছু একটা হতে পারে; এই ভরসা নিয়ে অন্তত ম্যাচটা দেখত তার ভক্তরা।
মাহমুদউল্লাহ কখনো পেরেছেন আবার কখনো পারেননি। কিন্তু এই বিশ্বাসটা ভক্তদের মধ্যে তিনি তৈরি করতে পেরেছিলেন। যা এক জীবনে যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর এই কাজটা করতে গিয়ে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাকে। কোনো কারণ ছাড়ায় দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে মিডিয়াতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কখনো কোনো অভিযোগ ছিল না তার কণ্ঠে। ঝরে পড়েনি কোনো ক্ষোভও। যখন ফিরেছেন, সৃষ্টিকর্তার দিকে আঙুল উঁচিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বড় কোনো ইনিংস খেলে। সেই মাহমুদউল্লাহ বিদায় বেলায়ও বড্ড ব্যতিক্রম। মাঠের ক্রিকেটে দীর্ঘ দেড় যুগ কাটানো এই কিংবদন্তি— বিদায় বেলায় বেছে নিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে। কোনো রাখঢাক না রেখে নতুন করে আর সমালোচিত না হলে জানিয়ে দিলেন অবসর। আগেই দুই ফরম্যাটকে বিদায় জানানো মাহমুদউল্লাহ ৩৯ বছরে পা দিয়ে ছাড়লেন রঙিন পোশাকের মায়া। ওয়ানডে অধ্যায়ের ইতি টানলেন ২৩৯টি ম্যাচ খেলে।
সুযোগ করে দিয়ে গেলেন তরুণদের জন্য। অথচ, মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ারটা কেবলই সেক্রিফাইসের। টপ অর্ডারের চেয়েও ভালো মানের ব্যাটার হয়েও ৭ ও ৮ নম্বরে ব্যাট করে গেছেন তিনি। কখনো চেয়ে গিয়ে উপরে উঠে ব্যাট করেননি। ৭ ও ৮ নম্বরে টেইলেন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করা যেখানে সবচেয়ে কঠিন কাজ; সেই কঠিন কাজটাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। দলের উইকেট পতনের মিছিলে শেষে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। কখনো ফিনিশিং টেনে দলকে জিতিয়েছেন। দীর্ঘ ওয়ানডে ক্যারিয়ারেও সেই ছাপ স্পষ্ট। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর দেশের হয়ে ২৩৯টি ওয়ানডে খেলে ৩৬ গড়ে তার রান ৫ হাজার ৬৮৯। এর মধ্যে ৩২ ফিফটি ও চার সেঞ্চুরি, যার সবকটিই আবার এসেছে আইসিসি ইভেন্টে। যা বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে তার শিকার ৮২ উইকেট। এ ছাড়া ৫০ টেস্ট খেলে প্রায় ৩৩ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৯১৪ রান। যেখানে তার নামের পাশে ১৬ ফিফটির আর ৫ সেঞ্চুরি। বল হাতে শিকার করেছেন ৪৩ উইকেট। আর ১৪১টি টি-টোয়েন্টিতে ২৪ গড়ে করেছেন ২ হাজার ৪৪৪ রান।
পাশাপাশি বল হাতে শিকার করেছেন ৪১ উইকেট। বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ফিনিশার হিসেবে হয়তো মাহমুদউল্লাহ থেকে যাবেন বহু বছর। যখনই ক্রাইসিসে পড়বে দল তখন মনের অজান্তেই হয়তো মাহমুদউল্লাহর ছবি ভেসে উঠবে চোঁখে। হয়তো তখন আপনাআপনিই বলে উঠবেন; ইশ এখন যদি মাহমুদউল্লাহ থাকত! যদিও এর আগে জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
২৪ঘণ্টা/আসো