বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

লোকে বলে তিন-চারটে বিয়ে অথচ শ্রাবন্তী কি বলেন

প্রকাশিত - ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫   ০৭:১৫ পিএম
webnews24

প্রশ্ন : অনেক দিন পরে রম-কম ছবি, ‘বাবুসোনা’?
শ্রাবন্তী : হ্যাঁ। আমাদের তো পরিচিতি তৈরিই হয়েছিল এই ধারার ছবির মাধ্যমেই। মাঝেমাঝে এমন ছবি বানানো প্রয়োজন। অনেকে বলেন ‘নাচাগানার ছবি’! আমার ভাল লাগে এই ‘নাচাগানার ছবি’।

প্রশ্ন : ২৭ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে। কত ওঠাপড়া। কী ভাবে হাসিমুখে সামাল দেন?
শ্রাবন্তী : নিজেকে শক্ত করে রাখতে হয়েছে। আমি মনে করি জীবন একটাই আর আমার জীবন, আমিই বাঁচব। আমার বিল কেউ ভরে দেবে না, বাড়ি-গাড়ির মাসিক কিস্তি কেউ ব্যাঙ্কে গিয়ে দিয়ে আসবে না। আমার ছেলেকেও কেউ মানুষ করবে না। আমিই করব এগুলো। তার পাশাপাশি আমাকেও ভাল থাকতে হবে। ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, মা-বাবাকেও ধন্যবাদ যে আমি এ রকম একটা জীবন পেয়েছি। মা-বাবা যত দিন রয়েছেন, তাঁদের সান্নিধ্যে রয়েছি। দর্শকের জন্য আরও ভাল কাজ করতে চাই, এটুকুই। বাকি কে কী বলল, আমার কিছু এসে-যায় না।

প্রশ্ন : চোরের চরিত্রে অভিনয় করলেন কেন?
শ্রাবন্তী : প্রথমে চোরের চরিত্র শুনেই রাজি হয়ে গিয়েছি। নিজের চরিত্রের বাইরে অভিনয় করতে পারলে ভালই লাগে। কেউ তো বিশ্বাসই করছিল না যে আমি চোরের চরিত্রে অভিনয় করেছি। লন্ডনে মনোরম আবহাওয়ায় শুটিং। নাচগান, মজা, একেবারে কমার্শিয়াল মশলা ছবি যাকে বলে।

প্রশ্ন : খুব অল্প বয়সে মা হয়েছেন, পাশাপাশি অভিনয়ও চালিয়ে গিয়েছেন। সামলানো কি কঠিন?
শ্রাবন্তী : আমি তো ভাগ্যবান যে অল্প বয়সে মা হয়েছি। আমার ছেলের সঙ্গেই আমি বড় হয়েছি। ১৬ বছর বয়সে মা হয়েছি। তখন দশম থেকে একাদশ শ্রেণি। আজ আমার ছেলে আর আমি বন্ধু, ভাইবোন। এখন ও আমার অভিভাবক। আমি ওকে ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ নাম দিয়েছি। এত শাসন করে আমাকে! আমাকে বলে, “তোমার মধ্যে কোনও দিন পরিণতিবোধ আসবে না! শিশুই থেকে যাবে!” আমি বলি, আমার এ রকমই ভাল লাগে।

প্রশ্ন : ঝিনুক তো প্রেম করছে?
শ্রাবন্তী : অবশ্যই। ওরা তো সেট্‌ল করবে। ঝিনুকের প্রথম প্রেম। এত বছরের প্রেম। আর ওর প্রেমিকা ওর থেকে বয়সে বড়, ফলে অনেক পরিণত। আমি তো ভীষণ খুশি। আমার আর ঝিনুকের অভিভাবক দামিনী। ও আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। বোনের মতো। আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ খুব সুন্দর। আমরা তিন জন মিলে ঘুরতে যাই, খুব উপভোগ করি।

প্রশ্ন : নিজেকে কতটা লড়াই করতে হয়?
শ্রাবন্তী : আমি তো লড়াই করেই যাচ্ছি। আমার ভাল লাগে লড়াই করতে।

প্রশ্ন : কখনও ক্লান্ত লাগে না?
শ্রাবন্তী : ভেঙে পড়ি মাঝেমাঝে। তবে তা কাছের মানুষদের সামনে। তার পর নিজেকে সামলে নিই। আমি ভীষণ অনুভূতিপ্রবণ। ভেঙে পড়েও নিজেকেই বোঝাই, ‘উঠে দাঁড়াতেই হবে। নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।’ না হলে এত বড় রাজত্ব চালাব কী ভাবে! মা-বাবা রয়েছেন, আমিই তো খুঁটি আমার পরিবারের।

প্রশ্ন : দীর্ঘ অভিনয়-সফরে কোনও আফসোস রয়েছে?
শ্রাবন্তী : আমি নিজেকে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে চাই। আমি চাই আমাকে অন্য কেউ ‘এক্সপ্লোর’ করুক। আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করতে ভালবাসি। আর ঈশ্বরের কৃপায় আমাকে কখনও অভিনয় শিখতে হয়নি। তাই একটাই আক্ষেপ, যদি পরিচালকেরা আমাকে আরও একটু ‘এক্সপ্লোর’ করেন।

প্রশ্ন : বর্তমানে একটানা ধারাবাহিক ভাবে কোনও অভিনেত্রী কাজ করতে পারছেন না বলে মনে হয়? পুরুষপ্রধান ইন্ডাস্ট্রি?
শ্রাবন্তী : শুধু আমাদের ইন্ডাস্ট্রি নয়। সব জায়গাতেই পুরুষতান্ত্রিকতার ছাপ রয়েছে। ছোট পর্দায় বরং অভিনেত্রীদের প্রাধান্য বেশি। তবে সত্যি কথা বলতে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আগের তুলনায় মহিলাকেন্দ্রিক ছবি হচ্ছে। রুক্মিণী ‘বিনোদিনী’ করল। আমি ‘দেবী চৌধুরানী’ করছি। তবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য যা ছবি পেলাম, সব করব— সেটাও ঠিক নয়। বরং বাছাই করেই ছবি করা উচিত।

প্রশ্ন : হিন্দি ওটিটির কথা ভাবছেন না?
শ্রাবন্তী : আমি তো করতে চাই। দেখা যাক। তবে নিজেকে নিয়ে পিআর করতে পারি না আমি। আমার লজ্জা করে। কাউকে ফোন করে বলব, তোমার পরের ছবিতে আমাকে নাও। আমি আমার বাবা-মার কাছেও কোনও দিন কিছু চাইতে পারিনি। সে ক্ষেত্রে যখন সঠিক সময় আসবে তখন হবে।

প্রশ্ন : কোনও বড় প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি করলেই তো…
শ্রাবন্তী : না না। আমি কোনও চুক্তিতে যাই না। চুক্তি করলে একটা প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আবদ্ধ থাকতে হয়। শুধু তাদের সঙ্গেই কাজ করতে হয়। আর আমি তো সবার সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করি। কিন্তু ছবির ক্ষেত্রে আমি একেবারেই চুক্তি করি না। আমার কোনও তাড়াহুড়ো নেই। উপযুক্ত সময়ে সবই হবে। শুধু নিজেকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রশ্ন : ডায়েটে কতটা মনোযোগী? শ্রাবন্তী তো খেতে ভালবাসেন…
শ্রাবন্তী : হ্যাঁ। আমি ভীষণ খেতে ভালবাসি। আর তা ছাড়া আমার একটা ছবির কাজ চলছে। সেখানে আমার চরিত্র খানিক ভারী চেহারার। তাই এই মুহূর্তে ডায়েট করছি না। যা ইচ্ছে হচ্ছে খাচ্ছি। কী যে আনন্দ! তবে বাইরের খাবার পছন্দ করি না আমি। আমার বাড়িতে যিনি রান্না করেন, চিত্ত, তাঁকে যা বলি বাড়িতে বানিয়ে দেন। বাড়ির খাঁটি উপকরণ দিয়ে তৈরি খাবার। এই তো পরশু বাড়িতে তৈরি বিরিয়ানি খেলাম আমি আর আমার ছেলে।

প্রশ্ন : পাশাপাশি জিমও তো চলে?
শ্রাবন্তী : হ্যাঁ, জিম করি নিয়মিত। আর যে দিন জিম করতে পারি না, ৫ কিলোমিটার হাঁটি।

প্রশ্ন : আপনার সৌন্দর্য নিয়ে সকলের আগ্রহ…
শ্রাবন্তী : আমি আসলে মায়ের থেকে পেয়েছি। আমার মা ভীষণ সুন্দরী।

প্রশ্ন : ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে কোন্দল। ফেডারেশন-গিল্ডের তরজা নিয়ে কী মত?
শ্রাবন্তী : কাজের জন্য খুবই ক্ষতিকারক এই ধরনের পরিস্থিতি। আমি শিবুদার (পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে আলোচনা করছিলাম বিষয়টা নিয়ে। শিবুদা বলছিল, “কাল আমাদের সঙ্গেও ঘটতে পারে।” আমাদের ছোট ইন্ডাস্ট্রি। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা উচিত। আমি তো নিজেকে শ্রমিক মনে করি। দিন আনি দিন খাই। যে দিন কাজে যাব, টাকা পাব। কাজে না গেলে তো উপার্জন হবে না।

প্রশ্ন : মুম্বইয়ে কাজের কোনও পরিকল্পনা নেই?
শ্রাবন্তী : মুম্বই যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি না আমি। ভাল কাজ এলে নিশ্চয়ই করব। তা ছাড়া ওখানে গিয়ে বেশি দিন থাকা সম্ভব নয় আমার। কলকাতায় যাতায়াত করতে হবে। আমার পরিবার রয়েছে এখানে।

প্রশ্ন : অনুরাগীদের নিয়েও তো আপনি আবেগপ্রবণ?
শ্রাবন্তী : হ্যাঁ। ওঁদের ভালবাসা পেয়ে আমি সত্যিই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। জীবনে হয়তো অনেক ঝুটঝামেলা দেখেছি কিন্তু দর্শকের নিঃশর্ত ভালবাসা পাওয়াটাই থেকে যাবে।

প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবন গোছানোর কথা ভাবছেন?
শ্রাবন্তী : আপাতত সে রকম কোনও পরিকল্পনা নেই। তবে ভবিষ্যতে করব কি না বলতে পারছি না। জীবন উপভোগ করছি।

প্রশ্ন : প্রেম তো করবেন?
শ্রাবন্তী : প্রেমে তো থাকিই। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে ভবিষ্যৎ ভাবতে শুরু করে দেয় সকলে। আমার একটু সময় লাগে সব কিছুতে। প্রত্যেকের বাঁচার অধিকার রয়েছে। সে কিসে ভাল থাকবে, সেটা তো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তা না, তিন-চারটে বিয়ে, সমাজের কত চোখরাঙানি! আমার কিচ্ছু এসে-যায় না!

২৪ঘণ্টা/আসো   #  সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন