শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১

এক দিকে মোগল সেনা, অন্যদিকে পারিবারিক বিদ্রোহ

প্রকাশিত - ১৩ মার্চ, ২০২৫   ০৫:২৮ পিএম
webnews24

২৪ঘণ্টা অনলাইন : মারাঠা সাম্রাজ্যের কথা উঠলেই বাজিরাও-মাস্তান-র কথা মনে পড়ে। সঞ্জয়লীলা বানসালির এই আলোচিত সিনেমা বাজিরাও আর মাস্তানির প্রেমকাহিনিকে ঘিরে বানানো হলেও এতে মারাঠা রাজ্যের একটা চিত্র পাওয়া যায়।

তবে সম্প্রতি আলোচনায় মারাঠাদের এক বিস্মৃতপ্রায় রাজা। ছাবা সিনেমায় দেখানো হয়েছে সাম্ভাজি মহারাজের কাহিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর থেকেই লক্ষ্মণ উতেকরের ছাবা বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। মুক্তির ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও সিনেমাটিকে ঘিরে এখনো দর্শকদের রয়েছে তুমুল আগ্রহ। এখন পর্যন্ত সিনেমাটি ৫২৫ কোটি রুপির বেশি আয় করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে সিনেমাটি ৬০০ কোটি রুপির বেশি আয় করবে।

‘ছাবা’ সিনেমা মারাঠা সম্রাট শিবাজি মহারাজের ছেলে সাম্ভাজিকে ঘিরে। আর সাম্ভাজি মহারাজের চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভিকি কৌশল। খুব বেশি বাজেটের সিনেমায় কখনো ভিকিকে আগে দেখা যায়নি। এদিক থেকে বলা যায়, লক্ষ্মণ উতেকর একপ্রকার বাজি ধরেছেন ভিকির ওপর। আর সে বাজি মাত করে দিয়েছেন ভিকি। সিনেমার নির্মাণ নিয়ে অনেক খুঁত ধরার অবকাশ থাকলেও ভিকি একদম নিখুঁত। বলা যায়, তাঁর অভিনয় দেখার জন্য এ সিনেমা দেখা সার্থক!

ছাবা গল্প শুরু হয় মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের দরবার থেকে। শিবাজি মহারাজ ছিলেন তুমুল প্রতাপশালী রাজা এবং আওরঙ্গজেবের সবচেয়ে বড় শত্রু। কারণ, শিবাজি মহারাজকে পরাজিত করার পরও মারাঠা সাম্রাজ্য দখল করার ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি আওরঙ্গজেবের। তবে শিবাজির মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র মোগল দরবার হয়ে ওঠে আনন্দে উদ্বেল। পথের কাঁটা দূর হয়েছে ভেবে উৎসবে মেতে ওঠে তারা। আর তখনই হাজির হন ছত্রপতি সাম্ভাজি মহারাজ। কিছুসংখ্যক সৈন্য নিয়ে হুট করেই মোগলদের সম্পদশালী শহর বোরহানপুরে আক্রমণ করেন। গুঁড়িয়ে দেন সাজানো নগর। লুট করেন সব সম্পদ। এ আক্রমণের মাধ্যমে সরাসরি মোগল শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন সাম্ভাজি।

এ আক্রমণ স্তম্ভিত করে দেয় মোগলদের। মারাঠাদের গুঁড়িয়ে দিতে সম্রাট আওরঙ্গজেব বিশাল বাহিনী নিয়ে যাত্রা করেন। অন্যদিকে মারাঠা সাম্রাজ্যের ভেতরই দানা বাঁধতে থাকে ষড়যন্ত্র। নিজের পরিবারের ভেতর থেকেই সাম্ভাজিকে সরাতে উঠেপড়ে লাগেন অনেকে। একদিকে মোগল সেনা, অন্যদিকে পারিবারিক বিদ্রোহ; এ দুটো কি সামাল দিতে পারেন সাম্ভাজি? কী হয়েছিল তাঁর পরিণতি? ‘ছাবা’তে এ কাহিনিই দেখানো হয়। ইতিহাসনির্ভর বড় বাজেটের সিনেমার তালিকায় ছাবা জায়গা করে নিয়েছে ভালোভাবেই। তবে গল্পটা কতটুকু জমল, এবার সেদিকে আসা যাক। ‘ছাবা’তে নির্মাতা লক্ষ্মণ উতেকর দেখাতে চেয়েছেন এমন একটি চরিত্র যে একাই এক শ। ছাবারূপী ভিকি কৌশল সেটা করেও দেখিয়েছেন। তবে এসবের মধ্যে যে জিনিসটা বাদ পড়ে গেছে, তা হলো একটি গল্প।

সাম্ভাজির পারিবারিক কোনো কাহিনিই সেভাবে সিনেমায় দেখানো হয়নি। সাম্ভাজির মা, স্ত্রী, আওরঙ্গজেবের সঙ্গে শত্রুতা বা আওরঙ্গজেবের মেয়েকে নিয়েও তেমন কোনো গল্পের বুনন চোখে পড়ে না। বরং একের পর এক অ্যাকশন দৃশ্যে সিনেমাটি একপর্যায়ে একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। অ্যাকশন কোরিওগ্রাফির মধ্যেও তেমন কোনো বৈচিত্র্য ছিল না যা মূলত ইতিহাসনির্ভর বাণিজ্যিক সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ। আবহ সংগীত নিয়েও কাজ করার অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু সিনেমার প্রধান প্রধান দৃশ্যেও এর অভাব বেশ ভালোভাবে অনুভূত হয়।

ছাবা সিনেমায় রয়েছে কিছু মনে রাখার মতো দৃশ্য। সাম্ভাজির সঙ্গে সিংহের যুদ্ধ, শেষ দিকে মোগল সেনাদের সঙ্গে তাঁর একক যুদ্ধ, কবি কৈলাশের সঙ্গে কবিতার মাধ্যমে সংলাপের আদানপ্রদান, কিংবা সাম্ভাজির হার না মানা দৃঢ়তা; এসব দৃশ্য যে কাউকে নাড়িয়ে দেবে। ছোট বাজেটের নির্মাতা থেকে এমন একটি বড় কাজ হাতে নিয়ে বেশ সাহসের পরিচয় দিয়েছেন নির্মাতা লক্ষ্মণ উতেকর। সিনেমাটিতে আবেগ, অ্যাকশন আর ইতিহাসের দারুণ এক মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি। আর এ কারণেই সাধারণ দর্শক এত পছন্দ করেছেন বলে মনে করেন নির্মাতা। অনেক দর্শকই মন্তব্যও করেছেন যে সিনেমাটির শেষ আধঘণ্টা সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত হিন্দি সিনেমার মধ্যে সেরা।
২৪ঘণ্টা/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন