বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার শেষ কোথায়

প্রকাশিত - ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫   ০৮:৫১ পিএম
webnews24

২৪ঘণ্টা অনলাইন : টানা দুই ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ দল। দুই ম্যাচেই শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতা পরিস্কারভাবে ফুটে ওঠেছে। তারা ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ায় বোলাররা সেভাবে লড়াই করতে পারছেন না। সে কারণে শেষ ম্যাচে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বলা যায় অভিজ্ঞরা যেখানে ব্যর্থ, সেখানে তরুণরা কি করবে সেই প্রশ্ন উঠেছে। চলমান আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আসর শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় ছিল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ দল। কেননা এই দুই দেশ এই আসরে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল নিয়ে শিরোপার মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালের আসরে খেলা সাত খেলোয়াড় নিয়ে এবারের আসরে এসেছে অস্ট্রেলিয়া আর তার থেকে একজন কম অর্থাৎ ছয় জন নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। ঐ দলের মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদ এবারও আছেন। ধারণা করা হচ্ছিল এবার তারা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ পারফর্ম করবেন। তবে বোলাররা তাদের কাজ ঠিক মতো করলেও ব্যাটাররা ব্যর্থ।

বিশেষ করে দলের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ চূড়ান্তভাবে পর্যায়ে। বড় ভাইদের পথে হাঁটছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের ব্যর্থতার ছাঁপ কাটাতে ব্যাট হাতে লড়ে দলের তরুণ ব্যাটাররা। তবে যেখানে সিনিয়ররা ব্যর্থ সেখানে তরুণরা আর কতটাই বা করবে? আসরের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে কোনোরকম প্রতিরোধ করতে না পেরেই হেরেছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি রাওয়ালপিন্ডিতে ঘুরে দাঁড়ানোর। ম্যাচের আগে কোচ বলেছিল তারা প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা খুঁচিয়ে ছন্দে ফিরতে প্রস্তুত। তবে মাঠে তেমনটি মনে হয়নি। দলে দুইটি পরিবর্তন নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামলেও ফলাফল সেই একই ছিল। যেখানে আগে ব্যাট করে ৩০০ রানের বেশি করলেও জয় নিশ্চিত নয়। ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা রান তুলতে ধুঁকেছে। অধিনায়ক নাজমুল হোসন শান্ত আর জাকের আলী অনিকের ব্যাটে টেনেটুনে ২৩৬ রানের পুঁজি দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই আসরে টাইগার স্কোয়াডে যাদের ওপর নজর ছিল তারাই রীতিমতো হতাশ করেছেন।

যদিও এমনটি নতুন নয়। গেল দুই-তিন বছর ধরেই দলের হাল এমনই। বাংলাদেশ আগে ব্যাট করতে নেমে দেখে শুনে খেলতে থাকে। ভারতের বিপক্ষে স্কোয়াডের থেকে সৌম্য সরকার বাদ পড়ায় এই ম্যাচে তরুণ ওপেনার তানজিদ তামিমের সঙ্গে নামের অধিনায়ক শান্ত। দেখে শুনে খেলতে থাকেন তারা। তবে দলীয় ৪৫ রানে তানজিদ আউট হলে ভাঙে এই জুটি। তারপর মেহেদী হাসান মিরাজ আর সবশেষ ম্যাচে সেঞ্চুরি করা তাওহীদ হৃদয়ও দ্রুতই ফেরেন। ৯৭ রানে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। তখনও উইকেটে এক পাস আগলে ধরে রেখেছিল শান্ত। রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন একটি যোগ্য সঙ্গীর। যেহেতু দলে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার রয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তাই ধারণা করা হচ্ছিল শান্তর সাথে যে কোনো একজন জুটি গড়ে দলকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলবেন। কিন্তু যেমন ভাবনা আর তেমন হয়েছে কই। একে একে তারা এসে দৃষ্টিকটু শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলকে আরো বিপদে ফেলেছেন।

এদিকে ১৮১টি বল ডট খেলার ব্যাখ্যা দিলেও সেটি সমীচীন নয়। ৩০০ বলের খেলায় ১৮১টি বলই ডট। অর্থাৎ ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩০ ওভারেরও বেশি বল থেকে কোনো রান আসেনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাঁচা-মরার ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন কান্ড করেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। যা ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। এতো ডট বল খেলার দায় নিয়মিত উইকেট হারানোকে দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্ত তিনি বলেন, ’এই জায়গায় তো অবশ্যই উন্নতির জায়গা আছে। দেখুন, আমরা নিয়মিত তিনশ করি না। এটা সত্যি। মেনে নিতেই হবে। আজকের যদি আপনি ডট বলের কথা বলেন, আমরা ৫ ওভার, ১০ ওভার পরপরই একটা করে উইকেট হারিয়েছি। ওই জায়গায় ব্যাটারদের জন্য খুবই কঠিন যে কীভাবে স্ট্রাইক রোটেট করবো। একটা-দুইটা বড় জুটি হলে এই ব্যাপারটা হতো না।' শান্তর মতে নিয়মিত তিনশো করার অভ্যাস না থাকার ঘাটতিতে ধুঁকছেন তারা। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ভারতীয় কিংবদন্তি কড়া সমালোচনা করেছেন। মোটাদাগে ব্যাটিং অর্ডারের সকলেই ব্যর্থ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটায় বলার মতো স্কোর এসেছিল তাওহীদ হৃদয় এবং জাকের আলী অনিকের কল্যাণে। এরপর গত ম্যাচে হাল ধরেন অধিনায়ক শান্ত আর সেই জাকের আলী।

বাকি সকলেই ছিলেন ব্যর্থতার লম্বা মিছিলে। তবে দৃষ্টিকটু ছিল সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যর্থতা। বিশেষ করে মুশফিক টানা দুই ম্যাচেই ছিলেন ব্যর্থ। ভারতের বিপক্ষে গোল্ডেন ডাক মারার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে উইকেট দিয়ে এসেছেন, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। এরইমাঝে বাংলাদেশ দলের সিনিয়রদের এই ব্যর্থতা নিয়ে বড় কথাই বলেছেন ভারতের সাবেক ওপেনার ওয়াসিম জাফর। একসময় বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ জাফর সরাসরিই বলেছেন, আইসিসি ইভেন্টে পারফর্ম করতে পারেন না সিনিয়র ক্রিকেটাররা। ব্যতিক্রম হিসেবে ২০১৯ সালের সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্সের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র সম্ভবত সাকিবকে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দেখেছি, যেখানে তিনি ব্যতিক্রমী পারফরমার ছিলেন। আমি জানি না এটি চাপের কারণে হয় কি না, নাকি তারা নিজেরাই অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ফেলে, তারা যেন ঠিক পারফর্ম করতেই পারে না।’ 
২৪ঘণ্টা/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন