বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

রবিবারের কঠিন ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি ভারত

প্রকাশিত - ০৮ মার্চ, ২০২৫   ০৩:৪৮ পিএম
webnews24

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল : বরিবারের ফাইনাল মানেই যেন বিশেষ কিছু। হারই যেন নিয়তি ভারতের জন্য। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুইবার, ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুইবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবার করে ফাইনাল ভারতীয় দল হেরেছে। আরেকটি রোববারের ফাইনালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রোহিত শর্মার।  অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল জয়ের পরই অনেকে রোহিত শর্মার হাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দেখছেন। ৯ মার্চ রোববারের দুবাইয়ের ফাইনালে ভারতের সামনে কিউইরা দাঁড়াতে পারবে বলে বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না কেউ কেউ। ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। আইসিসি ইভেন্টের ফাইনালে এই দু’দল এখন পর্যন্ত দু’বার মুখোমুখি হয়েছে। দু’বারই শিরোপা জিতেছে নিউজিল্যান্ড। এবারও সেই ধারা বজায় থাকবে, নাকি দুবাইয়ে নতুন ইতিহাস গড়বে ভারত? সীমিত ওভারের ফরম্যাটে এই দু’দল আইসিসির ইভেন্টের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ২৫ বছর আগে। তখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নাম ছিল আইসিসি নকআউট ট্রফি।

২০০০ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে শচীন-সৌরভদের ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সেই আইসিসি নকআউট ট্রফি জিতেছিল ফ্লেমিং-কেয়ার্নসদের নিউজিল্যান্ড। সেটাই কিউইদের প্রথম আইসিসি শিরোপা। এর পর ২০২১ সালে সাউদাম্পটনে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় দু’দল। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ফাইনালে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে হারিয়ে দেয় ভারতকে। ২৫ বছর আগের সেই শিরোপার পর সীমিত ওভারে আর আইসিসি ট্রফির দেখা পায়নি কিউইরা। এর মধ্যে দু’বার একেবারে কাছে এসেও ব্যর্থ হয় তারা। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারলেও ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তারা অনেকটা ফটোফিনিশে। চরম নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ লর্ডসের সেই ফাইনালে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে দু’দলের স্কোর সমান, এর পর সুপার ওভারেও সমান রান তোলে দু’দল। শেষ পর্যন্ত বেশি বাউন্ডারি মারায় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। চলতি আসরের গ্রুপ ম্যাচে অবশ্য ভারতের কাছে ৪৪ রানে পরাজিত হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। দুবাইয়ে ভারতের ২৪৯ রান তাড়া করতে নেমে বরুণ চক্রবর্তীর ঘূর্ণিতে ২০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল কিউইরা। ফাইনালে সেই দুবাইয়েই মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল।

লাহোরে দাপটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর রোহিত শর্মাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার, ‘ফাইনালে উঠতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। একটা ভালো দলের বিপক্ষে কঠিন ম্যাচ খেললাম। এবার ভারতকে চাপে ফেলার অপেক্ষায় আছি। আশা করি, তাদেরও হারাতে পারব।’ গ্রুপ ম্যাচে জিততে না পারলেও ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। বিশেষ করে, তাদের শক্তিশালী টপঅর্ডারকে রান করতে দেয়নি। ফাইনালেও বোলারদের কাছ থেকে একই রকম নৈপুণ্য প্রত্যাশা করছেন স্যান্টনার, ‘দুবাইয়ে গিয়ে ভারতকে চাপে ফেলে দেওয়া আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে’। এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যদিও বৃষ্টি হলে তেমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সাদা বলের ক্রিকেটে কোনো ম্যাচ টাই হলে হবে সুপার ওভার। যতক্ষণ না কোনো দল সুপার ওভারে জিতছে, ততক্ষণ সুপার ওভার চলবে। ফলে ফাইনালে যদি ম্যাচ টাই হয়, তা হলে সুপার ওভার হবে।

বৃষ্টিতে রবিবারের ফাইনাল ম্যাচ ভেস্তে গেলে রয়েছে রিজার্ভ ডে। সোমবার হবে ম্যাচ। যদি সেই দিনও খেলা না হয়, তা হলে দুই দলকেই জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তবে ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ রোববার ফাইনাল! সাদা বলের ক্রিকেটে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল কি রোববার ‘সিনড্রোমে’ ভোগে? ঐতিহাসিকভাবে পরিসংখ্যানে চোখ রাখলে অত্যন্ত তেমনটাই মনে হবে। কারণ ভারত যখনই আইসিসি আয়োজিত সীমিত ওভারের ক্রিকেটের কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে এবং সে ম্যাচটি রোববার হয়েছে, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। কারণ ভারত যখনই আইসিসি আয়োজিত সীমিত ওভারের ক্রিকেটের কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে এবং সে ম্যাচটি রোববার হয়েছে, সেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হেরে গেছে টিম ইন্ডিয়া। এ ‘ফাঁড়া’ কাটাতে পারেননি সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাও। শুধু মাহেন্দ্র সিং ধোনি একবার সেই ফাঁড়া কাটাতে পেরেছিলেন। তাছাড়া বাকিরা সেই রোববার ‘ফাঁড়ায়’ ভুগেছেন।

সবমিলিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রোববার ছয়টি ফাইনাল (২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ধরা হয়নি) খেলেছে ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দল। তার মধ্যে পাঁচটিতেই হেরে গেছে। আর এবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালও পড়েছে রোববার। যা ভারতের ক্রিকেট ভক্তদের নিঃসন্দেহে ঘুম কেড়ে নেবে।
২৪ঘণ্টা/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন