বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

ঈদ বাজারে নিজস্ব স্থান দখলে রেখেছে কুমিল্লার খাদি

প্রকাশিত - ১৯ মার্চ, ২০২৫   ০৯:২৯ পিএম
webnews24

২৪ ঘণ্টা অনলাইন : জেলার খাদি কাপড় ঈদ বাজারে নিজস্ব স্থান দখলে রেখেছে। এক সময় খাদি কাপড় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। এখনো বছরজুড়ে জেলায় এ কাপড়ে তৈরি পোশাকের আলাদা কদর রয়েছে। খাদি কাপড়ের তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদা দেশজুড়ে। বিশেষ করে ঈদের সময় চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। প্রতি বছরই রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুমিল্লায় এ কাপড়ের জন্য আসেন ক্রেতারা। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখরিত থাকে খাদি কাপড়ের দোকানগুলো। বিদেশি কাপড়ের সাথে এবারও নিজস্ব স্থান দখলে রেখেছে কুমিল্লার খাদি। ঈদে তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সের সবার পছন্দের তালিকায় রয়েছে খাদি। কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, লাকসাম সড়কের রামঘাট এলাকায় খাদির সারি সারি দোকান। খাদি কাপড় কিনছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ক্রেতারা। সাশ্রয়ী দাম আর আরামদায়ক বলে খাদির চাহিদা সেই যুগ যুগ ধরে। ঈদ উপলক্ষে নিজে পাশাপাশি আপনজনদের উপহার দিতে খাদির দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা।

সরেজমিনে নগরীর কান্দিরপাড়, মনোহরপুর ও রাজগঞ্জের খাদি মিউজিয়াম, বিশুদ্ধ খাদি, নিপুণ খাদি ফ্যাশন, খাদি বিপণী, কুমিল্লা খাদি ভান্ডার, খাদি প্রিয়াঙ্গন, খাদি কুটির শিল্প ভবন, খাদি ইয়াছিন বস্ত্রালয়, কুমিল্লা খদ্দর, খাদি শিল্প ভবন, খাদি কটেজ, শিল্পী খাদি বিতান, খাদি বস্ত্র বিতান, পূর্বাশা গিফট অ্যান্ড খাদি-১, জ্যোৎস্না স্টোর, আজকাল খাদি ফ্যাশন, খাদি বসুন্ধরা, শুভেচ্ছা খাদি বিতান, আল আমিন খাদি ঘর, খাদি বস্ত্রালয় ও খাদি বস্ত্র বিতানসহ আশে পাশের খাদির দোকানগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে জমজমাট চলছে কেনাবেচা। প্রায় অর্ধশতাধিক খাদি দোকানে একই চিত্র দেখা গেছে। নরসিংদী থেকে কুমিল্লার বিশুদ্ধ খাদি ঘরে আসা ক্রেতা জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, কুমিল্লার ঐতিহ্য বহন করে এ খাদির দোকানগুলো। খাদির কাপড় গুলো একটি আভিজাত্য বহন করে এবং অনেক সুন্দর ও আরামদায়ক। আমি নিজের জন্য কিনেছি এবং স্বজনদের জন্য আরো কিছু কাপড় নিয়েছে।

নগরীর চর্থা এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে এতো সুন্দর ও আরামদায়ক পাঞ্জাবি শুধু খাদি কাপড়ের মধ্যে পাওয়া যায়। খাদির পাঞ্জাবি ছাড়া ঈদ আমরা চিন্তা করতে পারি না। পরিবারের ছোট বড় সবার জন্যই আমরা খাদির পাঞ্জাবি কিনে থাকি। মজিবুর রহমান নামে আরেক ক্রেতা জানান, খাদির কাপড় পড়তে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হয়। কুমিল্লাতে চাকরি করি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য সবার উপহার হিসেবে খাদির পাঞ্জাবি নিয়ে নিলাম। নগরীর কান্দিরপাড় আয়রা বুটিকস এর স্বত্বাধিকারী শারমিন আহমেদ চৈতি বলেন, কুমিল্লা খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত, এর চাহিদা অনেক বেশি, তাই আমরা প্রতি ঈদে নতুনত্ব করে এ কাপড় কে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি করে থাকি। খাদি কাপড়ের মধ্যে আমরা বিভিন্ন নকশা ও হাতের কাজ করছি, পাথরের কাজ করছি।  খাদি কাপড়ের দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

নগরীর মনোহরপুর রুপান্তর খাদি দোকানের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিদেশি পোশাকের সঙ্গে দেশি পোশাকও পাল্লা দিয়ে চলছে। পড়তে আরাম ও দামে কম হওয়াই ক্রেতারা আসছে দেশি পণ্য খাদি কিনতে। তিনি বলেন, মুলত খাদি কাপড় হাতে তৈরি করা হয় থেকে। তাঁতী সংকটের কারণে আমরা এগুলা মেশিনে তৈরি করতে হচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা খাদি কাপড়টাকে বিভিন্ন ভাবে তৈরি করে থাকি। নগরীর কান্দিরপাড় খাদি জোন্সার স্বত্বাধিকারী তপন কুমার পাল বলেন, তীব্র তাপদাহে খুব আরামদায়ক, শীতেও সহনীয় পোশাকটি ডিজাইনে এসেছে পরিবর্তন। দেশিয় নামীদামী ফ্যাশন শপে খাদি কাপড় আরও বৈচিত্র্য ও আকর্ষণীয় করে বাজারজাত করা হচ্ছে। এবারের ঈদেও চাহিদার শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লার খাদি।

কুমিল্লা খাদি বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও খাদি ঘরের স্বত্বাধিকারী প্রদীপ কান্তি রাহা বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ২০২১ সাল থেকে ঐতিহাসিক কারনে এ অঞ্চলে খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লায় চাহিদা বাড়ছে। খাদির দোকানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে খাদি কাপড় আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। দেশের বাহিরে বিদেশেও রয়েছে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা। পছন্দের পোশাকের  তালিকায় খাদি কাপড়ের ইতিহাস দেশের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। এটি মাটি ও মানুষের দেশজ শিল্প হিসেবে হচ্ছে বিবেচিত।
২৪ ঘণ্টা/এআর

 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন