২৪ ঘণ্টা অনলাইন : কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও দক্ষ কারিগরের সংকট, পুঁজির ঘাটতি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের তাঁত শিল্প। সৌখিন পুরুষের আভিজাত্যের অতীত ছিল রুহিতপুর লুঙ্গি।কেরানীগঞ্জের তাঁতে বোনা লুঙ্গি রোহিতপুর লুঙ্গি নামে পরিচিত।এখনও এই লুঙ্গির বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।কিন্তু লোকসানের মুখে পড়ে তাঁত শিল্প ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁতিরা।
একসময় তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত ছিল কেরানীগঞ্জের রোহিতপুরের তাঁত শিল্প এলাকা। এই তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তাঁতে হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান। তাঁতিরা জানান, তাদেরকে যথাযথ সামাজিক মর্যাদা না দেয়ার কারণে নতুন প্রজন্ম এই ব্যবসায় সংযুক্ত হতে চাচ্ছেনা।
এলাকাবাসী জানান, রোহিতপুর ইউনিয়নের উত্তর রামের কান্দা, দক্ষিণ রামের কান্দা,বাগ রামের কান্দা, নারায়ণ পট্টি, রোহিতপুর, কামারতা ও গোয়ালখালী গ্রামে প্রায় ১০ হাজার হস্তচালিত তাঁত ছিল। প্রতিটি বাড়িতেই দুই থেকে তিনটি তাঁত ছিল। রঙ, সুতা ও বুনন শৈলীতে রোহিতপুরের লুঙ্গির কদর ছিল সবার কাছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হতো। কিন্তু রঙ, সুতাসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লুঙ্গির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে লুঙ্গির উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ভারতীয় লুঙ্গি দেশের বাজারে ঢুকে পড়ে তা তুলনামূলক দাম একটু কম হয়, ক্রেতারা সেদিকে ঝুকে পড়েছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়ে যায় তাঁতিরা । এ কারণে ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র তাঁত শিল্প বন্ধ হতে থাকে।বর্তমানে এই এলাকার তাঁত শিল্প অস্তিত্বের হারানোর হুমকিতে রয়েছে। এই ঐতিহ্য শিল্প ধরে রাখতে সরকারের সহায়তার কামনা করছেন সংশ্লিষ্ট তাঁতিরা।
তাঁতি খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের বাড়িতে একসময় ১০/১২টি তাঁত ছিল। একটি তাঁতের পেছনে ১০ জন লোক কাজ করতেন। এখন কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁত বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। বাগ রামের কান্দা গ্রামের সফর আলী বলেন, আমাদের বাড়িতেও একসময় তাঁত ছিল। কিন্তু লোকসানের মুখে টিকতে না পেরে বন্ধ করে দিয়েছি। বাঁচার তাগিদে এখন বাবুর্চির কাজ করছি।
নারায়ণ পট্টি এলাকায় তাঁতি শরীফ হোসেন বলেন, বাপ-দাদার পৈত্রিক পেশা এখনো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। কারখানায় হস্তচালিত ৮টি তাঁত রয়েছে। বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ কর্মী রয়েছেন। কেউ সানাভরা, কেউ তানামাঝা, কেউ তানা কাড়ানো এবং কেউ তাঁত বুননের কাজ করছেন। তাঁতের কারিগর নয়ন (৫০) বলেন, প্রতি পিছ লুঙ্গির মজুরি মাত্র ১০০ টাকা। দিনে ২টির বেশি বুনতে পারি না। এই মজুরি দিয়ে সংসার চলে না।
এই ব্যবসার যুক্ত তাঁতি মো. রফিক বলেন, রোহিতপুরী একথান লুঙ্গি (৪ পিস) তৈরি করতে খরচ হয় আড়াই থেকে চার হাজার টাকা। আর তা বাজারে বিক্রি করে পাওয়া যায় দেড়-দুই হাজার টাকা। সুতাসহ আনুসাঙ্গিক সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেক তাঁত ব্যবসায়ী। এছাড়াও ভারত থেকে কমদামে লুঙ্গি আসায় এর ওপর প্রভাব পড়েছে। রোহিতপুর তাঁতি সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, সরকার যদি হ্যান্ডলুম বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে এবং রঙ, সুতার দাম কমায় তাহলে আমাদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী এই রোহিতপুরী তাঁত শিল্পের গৌরবকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
২৪ ঘণ্টা/এআর