শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

হকি এবং পুরানো দিনের গল্প

প্রকাশিত - ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫   ০৬:৫৬ পিএম
webnews24

মেজর চাকলাদার (অব.) : ১৯৮৩ সনের ২৬ অগাস্ট বিয়ে। শুক্রবার। শহীদ স্মৃতি হকি ফাইনালে আর্মি প্রতিপক্ষ রেলওয়ে। জেনারেল মতিন হকির সভাপতি। আমার রুমে কায়সার হামিদের ভাই সোহেল আসলো। সোহেল হামিদ স্কোয়াশ খেলাতে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ। কায়সার ত ফুটবল শ্রেষ্ঠ।এই পরিবার খেলাধুলাতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ পরিবার। মা রানি হামিদ বিশ্ব খ্যাত দাবারু। 

আমার রুমে আড্ডা চলছে হঠাৎ খবর আসল জেনারেল মতিন ডাকছেন। স্যার বল্লেন আজ বিকেল ফাইনাল হবে। বল্লাম স্যার আজত আমার বিয়ে। স্যার বল্ল, তাই ওরা আজই খেলবে। রিনার কাছে গেলাম, সাথে কর্নেল ফেরদৌস। বল্লাম , বিকেলে খেলা আছে। রিনা সব শুনে ভিতরে গিয়ে দুইটা রাখি এনে বাম হাতে পরিয়ে দিয়ে বল্ল, খুল্লে খবর আছে। ফেরত আসলাম, এই রাখি পরে কি করে খেলি! হাজার হাজার লোক খেলা দেখবে? রিয়াজ  বল্ল স্যার দুইটা রিষ্ট ব্যান্ড দিয়া রাখি ঢাইকা দিব। 

মাঠে আসার সময় কত কুসংস্কার যেমন এক শালিক দেখলে খুঁজতে থাকি জোড়া শালিক দেখতেই হবে, বিসমিল্লাহ বলে বল গড়িয়ে মাঠে দিবার সময় ডান হাত দিয়ে গড়িয়ে দিব, ডানপা দিয়ে মাঠে ঢুকব। খেলার আগে পেপটক করে মোনাজাত করে মাঠে নামার সময় ফেরদৌস স্যার বল্লেন, আজ চাকলাদারের বিয়ে, জিততেই হবে। ফার্ষ্ট হাফেই তিন গোল দিলাম , সেকেন্ড হাফে রেলওয়ে দল খেলতে চাইল না। রেলওয়ে দলে আমার সাথে জাতীয় দলে খেলে রেলওয়ে র সেলিম , বল্লাম খেলবেই না তবে আজ খেলার জন্য পাগল হইছিলি ক্যান ? বল্ল, তোর আজ বিয়ে মনে করছিলাম তুই খেলবিনা। বিয়ের পর রিনাকে নিয়ে দিল্লী গেলাম। দিল্লিতে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ গেলাম ওখান থেকে আজমির শরীফ।

গিয়াস উদ্দিন তোঘলক তখন সিংহাসনে। তিনি মোংগলদের আক্রমন ঠেকাতে নগর ঘিরে দুর্ভেদ্য প্রাচীর তৈরি করতে আদেশ করলেন, নিজাম উদ্দিন আউলিয়া চাইলেন দীঘি তৈরি করে সংবৎসরের পানি দিল্লি বাসির জন্য নিশ্চিত করতে। দিল্লিতে একই সাথে দিঘী কাটা আর প্রাচীর  নির্মাণের মত অত শ্রমিক ছিল না। বাদশাহ চাইলেন আগে শেষ হোক তার কাজ ততদিন অপেক্ষা করুক ফকিরের খয়রাতি খনন।বাদশাহর জোর অর্থের তার পরিমাপ করা যায় , ফকিরের জোর হৃদয়ের তার শক্তি অসীম। মুজুরেরা বিনা পারিশ্রমিকে ফকিরের তালাব কাটতে লাগল। বাদশাহ হুন্কার দিলেন ‘তবে রে’-। তার গর্জন আকাশে মিলাবার আগেই এত্তেলা এলো আশু কর্তব্যের, বংগে বিদ্রোহ দমনে ছুটতে হল সৈন্য সামন্ত নিয়ে। নগরে রইলেন পুত্র মোহাম্মদ বিন তুঘলক তিনি নিযাম উদ্দিন আওলিয়ার অন্যতম শিষ্য। তার আনুকূল্যে দিবা রাত্রি খননে আওলিয়ার দিঘী সমাপ্ত হল। তোঘলকাবাদের নগর প্রাচীর রইল অসমাপ্ত।

অবশেষে সুলতান গিয়াসউদ্দিনের ফিরহাদ সময় হল নিকটবর্তী। প্রমাদ গননা করল নিযামুদ্দিনের অনুরাগীরা। তারা নিয়ামুদ্দিনকে অবিলম্বে নগর ত্যাগ করতে বল্লেন। ফকির মৃদু হাস্যে বল্লেন— “দিল্লী দুর অস্ত।’ দিল্লী অনেক দূর। প্রতিদিন সুলতান যোজন যোজন পথ অতিক্রম করে রাজধানীর নিকটতম হচ্ছেন, ভক্তরা অনুনয় করেন আর ফকির একই উত্তর দেন ‘দিল্লী দূর অস্ত।

আর মাত্র একদিনের পথ, সুলতানের ক্রোধ আর নিষ্ঠুরাতা সবাই জানত। ফকির কে হাতে পেলে কি দশা করবে তাই ভেবে তারা শিউরে উঠছে বারংবার ।ফকির হাতের তসবি টিপে  বলে ‘দিল্লী হনুজ দূর’ দিল্লী এখনও অনেক দূর বলেন পরম ঔদাসীন্যে। নগর প্রান্তর পিতার অভ্যর্থনার জন্য মহম্মদ বিন তোঘলক তৈরি করেছেন মহার্ঘ্য মন্ডপ। কিংখাবের সামিয়ানা-জহরীতে জহরতে ঝলমল। বিশাল ভোজ তারপর হস্তী   যুথের প্রদর্শনী প্যারেড। পরদিন গোধুলি বেলায় সুলতান প্রবেশ করলেন অভ্যর্থনা মন্ডপে। সিংহাসনে পাশে বসালেন তার প্রিয়তম পুত্রকে, সে মোহাম্মদ নয় তার অনুজ। ভোজনান্তে হাতীর কুচকাওয়াজের অুনমতি চাইলেন মোহাম্মদ, হাতীর যূথ নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি নিজে।

কড় কড় কড়াৎ— একটি হাতীর শির সন্চালনে  স্থানচ্যুত হল একটি স্তম্ভ মূহুর্তে ভপাতিত হল সমস্ত মন্ডপ। ভীত, সচকিত ইতস্তত ধাবমান হস্তীযূথের গুরভার পদতলে নিস্পিষ্ট হল অগনিত হতভাগ্য। ভগ্নস্তুপ থেকে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আর তার পুত্রের প্রানহীন দেহ উদ্ধার হলো, মনে মনে এই পুত্র কেই তিনি মোহাম্মদের যায়গায় সিংহাসনে বসাতে চাই ছিলেন।

সমস্ত ঐহিক ঐশ্বর্য, প্রতাপ এ মহিমা নিয়ে শ্রুতির গিয়াস উদ্দিনের শোচনীয় জীবনাস্ত ঘটল নগর প্রান্তে। দিল্লী রইল তার জীবিত পদক্ষেপের অতীত। দিল্লী দূর অস্ত ।দিল্লী অনেক দূর। গেলাম নিজাম উদ্দিনের দরবার শরীফে। কে কে যায় তার রেজিস্টর আছে , নাম লিখার পর দেখলাম আমার বাবা সহ অনেক চাকলাদারই গিয়েছেন। পুকুর এখনও বিদ্যমান, পানিতে কয়েন ফেল্লে বহু উঁচু থেকে ডাইভ দিয়ে ছেলেরা সে কয়েন তুলে আনছে। বাংলাদেশের সর্বত্র বহু মাযার আছে। বাবা সাবরেজিষ্ট্রার ছিলেন তাই বিভিন্ন যায়গাতে পোষ্টিং হত, স্থানীয়দের কাছে সব মাযারই শ্রদ্ধা আর সম্মানের।

২৪ঘণ্টা/আসো
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন