২৪ঘণ্টা অনলাইন : পোষাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দৌড়ের সঙ্গে কিট পার্টনারের চুক্তি অনুষ্ঠান ছিল মঙ্গলবার। বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে কাউকে কিছু না বলেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। সাংবাদিকদের ডাকও এ সময় শোনেননি বাফুফে বস। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায় কি কারণে তিনি সবাইকে এড়িয়ে গেছেন। কিট পার্টনারের চুক্তির চেয়ে বড় অস্বস্থির নাম এখন নারী ফুটবলারদের বিদ্রোহ। অধিনসায়ক সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকার-সানজিদা খাতুন-মারিয়া মান্ডাসহ সিনিয়র ১৮ ফুটবলার অনুশীলন ত্যাগ করেছেন। বাফুফে সভাপতি নিজে খেলোয়াড়দের বুঝিয়েও অনুশীলনে ফেরাতে পারেনি। বেশকিছু সুত্র থেকে জানা গেছে, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে ৩৭ জন নতুন ফুটবলারকে নিয়ে নতুন চুক্তির সবকিছু নাকি চুড়ান্ত করা হয়েছে? যদিও বাফুফে থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। সাবিনা-সানজিদাদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের সঙ্গে চুক্তি বাফুফের, এটাই যেন বড় খবর ফুটবলের।
মূলত ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে বিবাদের জেরে অনুশীলন বর্জন করছেন সিনিয়র আর কার্যকরী ফুটবলাররা। সে সংকট নিষ্পত্তির আগেই ৩৬ জন ফুটবলারের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। যদিও এ প্রসঙ্গে এখনো সরাসরি কোনো বিবৃতি দেয়নি ফেডারেশন। জানা গেছে, গত সোমবার চুক্তিবদ্ধ হওয়া ৩৬ জনের প্রায় সবাই জুনিয়র ফুটবলার। তবে এখন সাবিনা-সানজিদারা চুক্তি না পেলেও তাদের চুক্তির আওতায় আসার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। তাদের চুক্তিপত্রও প্রস্তুত রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে চুক্তির আওতায় আসতে হলে আগে বাটলারের সঙ্গে তাদের সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরলেই তাদের সঙ্গে চুক্তি হবে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন সূত্র।
যদিও অনুশীলন বর্জন করা ১৮ ফুটবলার এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। এদিকে এর আগে ঘটা করে খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তি করলেও চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের সময়মতো পারিশ্রমিক দিতে পারেনি বাফুফে। এর ফলে প্রায়শই তৎকালীন বাফুফে কর্তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এবার জাতীয় দলের শীর্ষ খেলোয়াড়দের ছাড়াই ৩৬ জনকে চুক্তির আওতায় এনেছে বাফুফে। সাবিনা-কৃষ্ণারা ফিরলে তখন চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে যাবে। আসলেই বাফুফের এতসংখ্যক ফুটবলারকে মাসে মাসে বেতন দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাফুফের চুক্তির আওতায় ছিলেন ৩১ ফুটবলার। সেই ৩১ জনের মধ্যে আনাই মুঘিনি এবার ক্যাম্পে আসেননি। বাকি ৩০ জনের মধ্যে সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণাসহ মোট ১৮ জন কোচ বাটলারের অনুশীলন বর্জন করে চলছেন। সিনিয়র দলে থাকা ১২ জনের সঙ্গে বিকেএসপি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে থাকা বয়সভিত্তিক খেলোয়াড়দের ক্যাম্পে উঠিয়েছে বাফুফে।
চুক্তিবদ্ধ হওয়া ৩৬ জনের প্রায় সবাই জুনিয়র ফুটবলার। বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের বাফুফের সঙ্গে চুক্তির সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়নি। তাদের চুক্তিপত্রও নাকি প্রস্তুত রয়েছে, তারা যদি বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরেন, তখন তারা এই চুক্তির আওতায় আসবে বলে জানা গেছে ফেডারেশনের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে। এদিকে সাবিনারা না ফিরলে ফুটবলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ফুটবলের সাথে সংশ্লিষ্টরা। কোচের অপসারণ চেয়ে বিদ্রোহ করা সাবিনাদের ক্যাম্প ছাড়ার উপক্রম হয়েছে। ১৮ নারী ফুটবলার বাফুফে ক্যাম্প ছাড়লে সেটা বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অনেক বড় ক্ষতি হবে, এমনটি মনে করেন জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক। তার কথায়, ‘সিনিয়র ফুটবলাররা যদি চলে যায় সেই ক্ষতি বাংলাদেশের ফুটবলে অপূরণীয়। এটা জাতির দুর্ভাগ্য হয়ে থাকবে। দায় বাফুফেকে নিতে হবে। বাফুফের অবশ্যই তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। তারা যেন ফুটবলের সঙ্গে থাকেন এটা নিশ্চিত করাও বাফুফের দায়িত্ব।’
সাফ পুরুষ ফুটবলে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে ঢাকা সাফ ফুটবলে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম নায়ক গোলকিপার আমিনুল হক। সাফজয়ী দলের এই সদস্য সাবিনাদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে কোনো শিরোপা যে কত কষ্ট, পরিশ্রমে আসে এটা খেলোয়াড়রই জানে। সেখানে নারী দলের অনেকেই টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। খেলোয়াড়-কোচ সমস্যা অনেকদিন ধরে। খেলোয়াড়দের বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে ফেডারেশনের উচিত ছিল বিষয়টির মীমাংসা করে এরপর কোচ ঠিক করা। এখন ফেডারেশনের উচিত, দায়িত্বে যাদের অবহেলায় সংকট তৈরি হয়েছে তাদের অপসারণ করা।’
২৪ঘণ্টা/আসো